বাক্‌ ১৫২ ।। দেবারতি ঘোষ


 

কবিতা ১ : তার চুলে মেঘ রেখে দাও

 

পাহাড়ী ঝর্ণা নেমে এসেছিল পাথুরে নিরাপত্তা ছেড়ে

নারী বসেছিল একা পড়ন্ত বিকেল বেলায়, তারপর

পোশাকী নাম খুলে রেখে ক্রমশ জ্যোৎস্না হয়ে উঠছিল 

সারা দিন বন-জঙ্গলে বিষফল কুড়িয়ে বসেছ আহ্নিকে,

উপাস্য দেবতা উঠে গেলে, ভেবেছ ঈশ্বর নেই কোথাও

অথচ পাহাড়-নদী নিরুদ্বেগ পৃথিবীর দেহে রেখে যাচ্ছে শান্তি,

জ্যোৎস্না থেকে আবার অনায়াসেই জেগে উঠছে নারী

 

তুমি স্বেদ আর রক্তের স্বাদ চেন

চেন রক্তের গাড় লাল, চেন রক্তের গাড়তম ক্লেশ,

তবু নারী জ্যোৎস্না ছেড়ে পাশে এসে বসলে

তোমার দু চোখে ঢেলে নাও উষ্ণ প্রণয়,

বুক, পিঠ, কটিদেশ, উপত্যকা জুড়ে শীতেও উত্তাপ

পিচ্ছিল পথ চাঁদনীতে কেমন পেলব হয়ে ওঠে 

নারীকে তুমি চেয়েছ বারবার

মাটি দিয়ে প্রতিমা গড়েছ, রং-তুলিতে বিবসনা প্রণয়িণী,

ধাতব দেহে উপাসনা ঢেলে ভেবেছ ভালোবাসা পাবে আমরণ 

অথচ নারী বুকে গতিশীল নদী, ছাতিমের ঘ্রাণ, ঘরছাড়া পাখি, আরও কত কি

কোন একটি অয়নান্তের অপেক্ষায়

তার চুলে এক টুকরো মেঘ রেখে দাও, ঠোঁটে কোনো বুনো ফল 

 

 

 

 

কবিতা ২ : অন্তঃসার

 

 

আকাশের দিকে চেয়ে ভেবেছি সমুদ্রে বেড়াতে যাবো

কলুষ ধাতুমল মুছতে মুছতে প্রশস্ত রাজপথ চলেছে  

ভাবছি এটাই পরিতৃপ্তি, বাতাসে সবুজ গন্ধ মিশছে

ঢেউয়ের বিছানা উদাসীন বৈঠক খানা ভিজিয়ে  

পায়ের আঙুল-ভাজে বালি রেখে যাওয়া দুপুর জুড়ে

অ-ব্যক্তিগত আশ্রয়ে নিভৃত গালিচায়; কত শান্তি !

 

ভাবতে ভাবতে সমুদ্র শুষে নিচ্ছে শরীরের সমস্ত জল

প্রবালের স্তর ভুগছে কোনো অজানা অসুখে,

প্রবীণতম কাছিমের সত্যের মত কিছু সত্য

শৈবালের জাল বুনে ফেলছে চারপাশে, পরিতৃপ্তি কি ? 

তৃষ্ণার জল সমুদ্রে খুঁজতে যাওয়া কি অর্থহীন নয় ?

এদিকে আমার চারপাশের প্রাচীন প্রাচীর ভাঙছে

সীমাবদ্ধ বক্ররেখা সর্পিল পথের কঠিন জ্যামিতিতে

বড্ড গুলিয়ে যাচ্ছে

স্থুল মিথ্যেগুলোর অনিশ্চিত একতরফা সব কাহিনীর মত 

একগুঁয়ে সত্যি গুলো কখনো সমুদ্র খোঁজে না

একটু বারুদ আর একটা দেশলাই কাঠিই তার যথেষ্ট 

 

No comments:

Post a Comment