শিল-কাটাও
কিছু কিছু শব্দ লিখে প্রকাশ
করা যায় না। বেশ কিছু ধ্বনি কলমের ডগায় লিখে ফেলা খুবই শক্ত। ঠিক যেমন শিউচরনের
হাঁক— শিলকাটাওওওও। শেষের ‘ও’টা এত সুন্দর টানে যে একটা সুরেলা আমেজ তৈরি হয়ে যায়।
প্রায় দশ বছর পর আবার এই হাঁকটা দিল শিউচরন। এই দশ বছরে অনেকটা বুড়ো হয়ে গেছে ও।
এই দশ বছরে বেলেপাথরের উপর ছবি ফুটিয়ে তোলা হাত শুধুই হাতুড়ির ঘায়ে পাথর ভেঙেছে।
অবিকল আগের মতো আরও একবার হাঁক দেয় শিউচরন। এই দশ বছরে ঘরে ঘরে শিল-নোড়ার জায়গা নিয়েছে
মিক্সি। কমতে কমতে শিল-নোড়া লুপ্তপ্রায়। কাঁধের ঝোলাটায় নতুন ছেনি-হাতুড়ি, পুরোনোগুলো সব জমা
নিয়ে নিয়েছিল থানায়। ফ্ল্যাট আর পুরোনো বাড়ির মিশেলে মফস্সল থেকে শহর হতে চাওয়া জনপদটায়
হাঁক দিতে দিতে ওর লুগাইয়ের কথা বড় মনে পড়ে শিউচরনের। ও যে বড় ভালোবাসত ওর
ঘরওয়ালিকে। জেলে থাকা দশটা বছরের প্রতিটা মুহূর্ত শুধু লক্ছমি’র কথাই মনে করেছে
শিউচরন। ছাপড়া থেকে এসে রেললাইনের ধারে কিরায়ার ঝোপড়িতে বাসা বেঁধেছিল দু’জনে। লক্ছমি বলত, তুমহি তো
শিল্পী আছো। মুখে লাজুক হাসি থাকলেও বুকটা ভরে উঠত শিউচরনের। যার হাতের ছোঁয়ায় পাথরে
ফুটে ওঠে হরেক কিসিমের নকশা, মাছ, ফুল; সে তো শিল্পীই। খুশওয়ালিতে ভরা ছিল সংসার। ছোটা পরিবার, সুখী
পরিবার। কিন্তু এই ছোটা পরিবারে অনেক সোহাগ করেও লক্ছমিকে সন্তান দিতে পারেনি শিউচরন।
শিলকাটাওওওও। আবার
হাঁক দেয় শিউচরন। চারপাশের বাড়িগুলোর স্তব্ধতা ভেঙে চমকে দিয়ে কোনো এক অনুষ্ঠান
বাড়ি থেকে ডেকেও ফেলল ওকে। ঠিক পাশেই মুরগি কাটা হচ্ছে। শিউচরন শিলের
উপর ছেনি বসায়। অনেকদিনের অনভ্যস্ত হাত টুকটুক শব্দ তোলে। কাজ শেষে শিলে ফুটে ওঠে
এক নারীমুখ—লক্ছমি। শুধু
কপালে একটা লাল টিপ হলে ভালো হত।
সেদিন লক্ছমির জন্য লাল টিপ কিনেছিল
শিউচরন। হঠাৎ দুপুরে ফিরে চমকে দেবে ভেবে ঝোপড়ির দরবাজা খুলতেই...
খাটিয়ায় লক্ছমি আর একটা আদমি, নঙ্গা।
ঝপ করে একটা শব্দ।
কিছু শব্দ লিখে প্রকাশ করা যায় না। পাশেই মুরগি কাটা হল। এক ফোঁটা রক্ত
ছিটকে এসে পড়ল শিলের উপর। ঠিক লক্ছমির কপালের মাঝখানে।
এক ফোঁটা রক্ত সেদিন
এমনভাবেই ছিটকে এসেছিলো শিউচরনের মুখে। কাঁধের ঝোলা থেকে হাতুড়িটা রাগে বসে
গিয়েছিল লক্ছমির
মাথায়। ফট্ করে একটা শব্দ হয়েছিল। কিছু কিছু শব্দ লিখে প্রকাশ করা যায় না।
বাহ্
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDelete