বাক্‌ ১৫২ ।। অমিত চক্রবর্তী

 


 

 

পুরোনো আবর্জনার গল্প

 

 

মাঠে পড়ে থাকা গ্রেনেডের ভয়

নিজেকে নিজের শত্রু বানায় মানুষ

সে কিন্তু গড়িয়ে যায়, পাথরের সঙ্গে মিশে

পাথুরে গেরিলা হয় সেই ঝিমোনো গ্রেনেড,

আমি জলছড়া দিই,

ঢাকা দিয়ে রাখি তাকে ঘাসপাতা, দুব্বো চন্দন এঁকে,

এলোমেলো অ্যানার্কি চেয়েছিল বলে

বকুনি দিই এক একবার, পড়াশোনা শেষ হোক আগে,

তারপর তো দেশোদ্ধার।

রোদে শুয়ে থাকা

ছাগলনাদির ভিড়ে ঝিমোয় সেই গ্রেনেড,

ঝিমোনো বাঁশপাতা থেকে পাখাওলা উইন্ডমিলে

উড়ে আসে রেণুসুর, বন্ধু হবে তার, জড় হবে

গা শুঁকে শুঁকে, ঘেঁসে ঘেঁসে, মন দাও পড়ায় এবার,

দগ্ধ হও

 

ভালোমানুষেরা সামান্য খারাপ বেশিটা ভালো

এইসব ভালোমানুষেরা তোমাদের মনকেমন করে না

এতসব পুরোনো আবর্জনার গল্প শুনে?

 

 

 

 

 

রুহিতন ভাবতো কৌশলের

 

 

এমন নয় যে সে ছিল একটু ভীরু প্রকৃতির,

উনি তো কাদার তাল”, তাই পদে পদে হোঁচট

বা হেরে যাওয়া একেবারে শেষ ঘন্টায়, রেফারির

বাঁশি শুনলেই বিড়ম্বিত সাজ। মনোভঙ্গ আসলেই একটা

সংশোধন চিন্তাগুলির, আবার ফিরে গিয়ে

পাশের রাস্তা ধরা, এক পা ভুলেযাওয়া স্টেপে,

অন্য পা ক্ষমায়। কী ভেবেছিলে তুমি,

রুক্ষ রাস্তা, ধুলো মাটি সব

ভিজিয়ে দেবে সে চোখের জলে,

তোমাদের তাহলে ইতিহাস পড়া নেই, শোনো তবে,

শীতের বৃষ্টি যদি আসে, যদি আস্ফালন করে ফের

পাপোষ ভিজিয়ে, আমিও প্রস্তুত, আমিও শ্রী রাগ থেকে তৎক্ষণাৎ

ফেরত যাব মল্লারে, আমাদের বর্গক্ষেত্রের ঔদ্ধত্য নেই ঠিকই,

হয়তো বা আমরা সেই ছোট গ্রামের রম্বাস,

তবু পাড়াশুদ্ধ লোক আমাদের রুহিতন ভাবতো কৌশলের।

 

 

 

 

 

রহস্যপুরের হাট

 

 

কোরা কাগজের পাহাড় জমে ওঠে টেবিলে

চেয়ারও লতানে রুগ্ন সরু কাগজের নীচে,

পাকানো চিরকুট আঁকড়ে সে দেখে সাদা আলোও এবার

প্রিজম ভেবে নীল হয়ে গেছে। আমি এর আগে কখনও

জাহাজডুবি দেখিনি, মা বলেছিল, মনে রাখিস

আমরা ছোট গ্রামের প্রান্তিক লিখিয়ে, তোমার

এই সব বেয়াদপি কিন্তু ওদের সমাজে চলবে না

বেশি দিন। এই ভাবে নির্মল স্বচ্ছতা আসে তার

পদ্যলিপি জীবনে, প্রতিটি কাগজের কোণায়

সে দেখে নীলাভ ছটা, ধারালো ফিনিক,

আবরণ নেই আর অসুখের, বিস্মৃতি এত বড় সম্রাট নয় যে

দুহাতে বাঁচাবে এই দাড়িওলা লোকটাকে, এতদিন পরে

মোহজল থেকে ছেঁকে আনবে বা

কবিতার ভাগ্যফের পাল্টে একটা সাধারণ মাপের বিড়ম্বনা

ছুঁড়ে দেবে রহস্যপুরের হাট থেকে কিনে।

 

 

 

 

 

অনাহূত

 

 

কী ভাবে যাব এই অনিরূপ আমন্ত্রণে, থ্রি পিস স্যুট না

হামিংবার্ড সাজে, মাধবী মধুপে হল কি মিতালী,

মাতাল মধুকর, মিতালী হলো কি, একটা আকুলি টের পাই

টগর গাছে, গন্ধরাজ হয়তো ভাবছে

তার শেষ দানের কথা, উচিত ছিল

রাজাকে ক্যাসল করা আগে, ভুয়ো সম্প্রীতি এবং

উদাহরণের জাল থেকে বাঁচানো। অযথা মনোবেদনা,

মাতব্বর ফড়েদের জ্ঞান। ইতিমধ্যে রোদ উঠেছে কিন্তু,

আমি টের পাইনি, আকাশের সাজানো পরিকল্পনায়

ফস্কে গেছে ঝলক, এখন সহজ পরিমিতি বোধ, এখন

কী ভাবে যাব এই উজ্জ্বল বিকেলে, কোন ফুল হাতে,

কোন পকেটে রুমাল, অথচ ভিড়ের মাঝে অদৃশ্য উঁকি,

অথচ হামিংবার্ড সেজে লুকিয়ে ঝঙ্কার।  

 

 

 

 

বাঁধের পেছনের জল

 

 

দু দুটো বডিগার্ড, মুষকো জোয়ান দিয়ে সে

ভাবনাগেট রক্ষা করে  বাঁধের পেছনের জল,

কোন ইঁটপাথর খসাবে প্রথমে?

হয়তো তার মেধাসম্পদ। পুরোনো স্বপ্নগুলি।

সে বোধহয় এদের গুরুত্ব দিয়েছিল

অকারণ, তাই গল্পগুলি বলে ফেলে আবার।

 পাহাড়ে কিন্তু আমি এসেছি আগে,

পেছনে একটা ঘোরানো পথ ছিল,

অনুপ্রিয় নামের আম্রকানন, খাড়াই দেখে

আমার সন্দেহ বাড়ে এবার।  কি আমার

বয়ঃসন্ধির দোষ না অযথাই ট্রিগার হ্যাপি আমি

ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে কি যেন একটা

ফেলে এলাম কোথায়, পুরাকথা না

অলৌকিক দান এবারে এই ভিন্নরূপার

জলসন্ত্রাস, যদি বাঁধের পেছনের জল

কথা বলতে জানত, প্রিন্ট করে ছাপাত

প্রতারণার ধাঁধাম্যাপ।

 

No comments:

Post a Comment