বাক্‌ ১৫২ ।। রাখী সরদার


 

একটি অতিলৌকিক কথন অথবা নিছক স্বপ্ন



অসংখ্য নক্ষত্রের কাহিনী থেকে জন্ম 

নিচ্ছে নীল অন্ধকার ; তীব্র
অন্ধকারের পটভূমিতে একটি নদী
ছুটে চলেছে সঙ্গমের দিকে

গাছে গাছে হিজল ফোটার পূর্বেই

একগুচ্ছ মায়াবী ধানগাছ গর্ভফুল 

মেলে ধরে! আর এমন পাগল দৃশ্যে   পক্ষীরাজ উন্মাদ


পক্ষীনীর দিকে পালক উদোম করে    অঙ্গের আরাম নিতে নিতে 

ঘুমিয়ে পড়ে


এতক্ষণে ঘুমবন্ধুর পাশে উঠে আসে  স্বপ্নরানী । ঘোরলাগা বিবস্ত্র শরীর,

গলায় পদ্মকুঁড়ির মালা।একটি স্তন
লাল-নীলে লীলায়িত,অন‍্যটি হলুদ
সবুজ।সুন্দরীর নাভি থেকে উড়ছে
এক সোনালি ভ্রমর। সেই ভ্রমরের    ঘননীল গাত্রঘ্রাণে পিছু নিই ; সাথে  হানাদার চাঁদ...



ভ্রমর অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে
'কে তুমি?কোনো দেবতা ,নাকি
ধূর্ত ইবলিশ?'


আমার কথা থাক‌। বলো,কে ওই
নারী! যার দৃষ্টির বিলোড়নে মূর্ছা
যেতে পারেন স্বয়ং ঈশ্বর! যার যোনির  লাবণ‍্যে হয়তো শিশু লোরকা হয়ে

উঠেছিলেন কবিদের কবি!


'লোরকা! সে কে ?'


তিনি হলেন কবিতার ব্রহ্মান্ড। তাঁর  কথা থাক।এখন বলো কে ওই  শ্রীমতী ?



'পরিচয় জানা নেই । যা ভাববে এই
রমণীকে ঘিরে ,তোমার চোখে   তেমনই দৃশ্যের লিরিক হয়ে বেজে    উঠবেগহন আশাবরী অথবা

সম্ভ্রান্ত পূর্বাশা।'


তবে তোমার কথা বলো ।



'আমি আর কে ; আমি সমগ্র
পতঙ্গের মাঝে  একপ্রকার অসীম

বিচ্ছেদ কিংবা শুধুই লক্ষ ফুলের
রোমাঞ্চ। একদিন দুর্জয় গোলকধাঁধা  পেরিয়ে ভুলবশত ঢুকে গেছিলাম

শ্রীকৃষ্ণের বাঁশিতে। প্রভু ফুঁ দিতেই
আছড়ে পড়ি এক নীলাম্বরীর
বক্ষখাঁজে । তৎক্ষণাৎ সে বিম্ববতী   কৌটে ভরে চালান  করে দ‍্যায় 

মীনাবাজারে।'



মীনাবাজার! সে আবার কোথায়!


'সে এক জাদুনগরী । যেখানে  দলে  দলে ঘুরে বেড়ায় ফ‍্যাকাসে নর্তকীরা।

তাদের  শীর্ণ কটিদেশে ঝুলে থাকে

আদিম বাসনার স্তূপ । রূপকথার  হন্তদন্ত পেরিয়ে সন্ধেকালে একজন

টাকমাথা কবি আসেন। তাঁর ঝুলি 

থেকে বের হয়গুচ্ছ তালপাতার 

পুঁথি আর সুজনিকাঁথায় মোড়া একটি  ছোট্ট পারাপারের ট্রেন ।'




সেই  ট্রেনের যাত্রী কারা ?




'অসংখ্য যক্ষযক্ষী,তেজমূর্তি এক 

যোগী ।যোগীর  পাশে বসে থাকেন

এক বামন নারী। '


বামন নারী ! তিনি  আবার কে?



'নারী খুব বাঙময়,মাঝে মাঝে
গালিবের গজল শোনায় আর রূপোর
কৌটো থেকে আমাকে বের করে  বিষ ঢেলে নেয় গলায়।'



আর যোগী ?


'যোগীর ভুবন এখন তছনছ। ধর্মের
ফুল,বেলপাতা পাতি নেতাদের
খিল্লি হয়ে উড়ে যাচ্ছে তৈলকবলিত
বণিক সমাজে।'



আর যোগীর তপোবনের কী অবস্থা?



'ঋক্ষরাজ বাঁদর বুদ্ধিতে ভেঙে  ফেলছে অরণ‍্যের নিবিড় ,ভেঙে 

ফেলছে ছাত্রলীগের মেরুদণ্ড  । আর  মৃত্যুটিলায় ভ্রমণরত   যোগীর

হরিণী ছটফট করছে নীল বিষে ।কেননা একজন ব‍্যাধ ছল করে যে
হরিণীর দেহসীমানায় ঢুকে পড়েছে।'



ব‍্যাধের একমাত্র উদ্দেশ্য কী?



'এর উত্তর তো তুমি নিজেই...'


আমি!


'হ‍্যাঁ তুমি , এই সংসারের হিসেবে 

তুমি না হতে পেরেছো প্রকৃত মানুষ,
না হতে পেরেছ কোনো উদাসী  পতঙ্গ।'




কী বলছো !



'তোমার দু'চোখে জ্বলছে ঈর্ষার ছুরি,
পাপ ও মিথ‍্যাচারে তোমার হৃদয় ঘিরে
কম্পিত আঁধার ও কাফনের ঘ্রাণ।'



ওহো রূপসী ভ্রমর , এবার চুপ করো।



'শোনো ,একটিবার অন্তত মানুষের
মতো কাজ করো এই যা দেখলে,
বা শুনলে ,সবটাই নিদ্রার উচ্ছ্বাসে
মুছে দাও ... '



আমি তো ক্ষুধার্ত ব‍্যাধ । কোনো   মৃণালিনী - ঠোঁট নয়, ব‍্যাধিনীর প্রখর  নখের কাছেই  আমার চির আশ্রয়।

অথ এব হে ভাবমুগ্ধকারী ভ্রমর   তোমার ইচ্ছাতেই ফুরিয়ে যাবো।তার  

পূর্বে তীব্র হত‍্যার প্ররোচনায় সমগ্র  দৃশ্য


এফোঁড় ওফোঁড় বিঁধে আদ‍্যোপান্ত 

এই খেয়ে ফেললাম‌।

No comments:

Post a Comment