বাক্‌ ১৫২ ।। ইহিতা এরিন

 

* হিমাঙ্কের উচ্চারণমালা

 

বিস্ময়বিন্দু...

ই হিহি তা উচ্চারণ করো আর দেখো শীতভাব জেঁকে বসেছে শরীরে!

 

হিমঘ্রাণ প্রত্যাশী উন্মূল দূরত্বে নির্লিপ্ত ছায়ার অংশভাগী সে। মোমের ভাস্কর্য! নিজের ছায়ায় ভেঙে যায় জলমুকুর। 

মেঘ ও মন্তাজ।

 

আগুনপোড়াসন্ধ্যা খুলছে পারস্যের গোপন গোলাপ...

 

বুকের অলিন্দে ছিমছাম বাজতে থাকে মেঘমল্লার রাগ ও বিপন্ন পদাবলী। অ-ব্যবহারিক শশবিন্দু নদীর নামে আঁকছে নিজের নাম। কত কত মনোভঙিমা হারিয়ে গেছে কমলঝরিয়ার গানে। ওই এই ম ম করা টান।  

 

তার টুকরো টুকরো চৈত্রদাহ, বিন্দু ও বিন্দু ঘামটুপটাপ গতরের গল্পে শীতভাব উবে গেলে টিকে থাকে যে নাম, তার সর্বনামে চিৎকার ওঠে হি হি তা, ইহিতা ইহিতা!

 

 

 

 

* গিটারিস্ট আঙুলের ইশারা

 

জলাশ্রিত মাংসাংশ ১তারা, কাছেপিঠে সীমান্ত ওপাড় তবু পড়া যাচ্ছে জলজ ঝুমঝুমি!

 

এমন তরলায়িত রাতে দূরের ল্যামপোস্ট খুলছে নুনের স্বাদ, সমদ্বিবাহু ত্রিভূজ তখনও খোলে নি অাগ্নেয় লাভার বেডরুম!

 

গিটারিস্ট পঞ্চম আঙুলের ইশারায় ঘামেরা খুলছে ৬৪কলার এই মহাবিদ্যালয়!

 

লাভা ও লালার সুতোমিশ্রিত আমাজন বনজপত্রী একটা ম্যাচবক্স ও ড্রপআউট ক্যাচের অভাবে ভুখা রয়ে যাচ্ছে আজও...

 

 

 

 

* সানসিল্ক রোদ  

 

বুঝতে পারি, তবু চুপ করে থাকি,

খুব কম কয়লাই হীরা হয়।

গাছেরা ঝরে ঝরে, মরে মরে কাঠ

বসতিজুড়ে মানুষের বর্জ্য, ময়লা ও কফ।

 

গাছের নিরাময় করবো বলে পা বাড়াই।

গাছের ডাক্তার যদিও জানা নেই,

থাকি ঠিক সেখানে; যেখানে চারাগাছ মাথা তোলে।

 

আহত শিরীষ উড়ে যেতে দেখেছি

কাঠপিঁপড়ের মরে যেতে থাকাও...

ময়লার স্তুপের ওপর রঙিন প্রজাপতি।

 

বুনোবাতাসের আঙুলে আঙুল রেখে

হেঁটে যায় সানসিল্ক রোদ।

 

 

 

 

* শূন্যে পতিত হই

 

লো ভোল্টেজ।কুয়াশাবাড়ির আঙিনায় নামতাপাঠ।

শট সার্কিট। আগুন- আগুন সঙ্গমে ছুরির জন্ম।

পাপ। প্রক্ষালন। ইরেজারে গোটা অক্ষরে প্রতিচ্ছবি।

 

জন্ম কিংবা মৃত্যু। হয়তো একই।

চোখের ভাষা। বুকের ক্ষরণ। উল্লাস।

জ্ঞান। অভিশাপ। সমান।

সময়ের বাহুতে ভর করে চলে দূরগামী পাখি।

 

ভেঁপু'র শব্দে ঘুম ভাঙে বৈকালিক মাঝির।

বাস্তবতা কল্পনা অপেক্ষা ক্ষুদ্র!

মিথ্যার প্রভাব তবু অলৌকিক জাদুর মতো;

ক্ষুদ্র চোখে তা উপলব্ধি বড় কঠিন।

 

শূন্য থেকেই যদি তৈরি হয় সবকিছু!

শূন্যজন্মের কসম;

চলো শূন্যেই পতিত হই।

 

 

 

 

·        কবোষ্ণ কবর ও ফলিং স্টার

 

 

মায়ের কবর থেকে মানুষের গান ভেসে আসে বহতা বাতাসে।

প্রায়ই কবরের কাছে গেলে শুনি, সবার ওপরে আছে মাথা যার

মাথা নোয়ানোর পরিসর নেই তার অতএব গান হও মানুষের।

ঘাসফুল ,শতবর্ষী বটের সাথে মায়ের সখ‌্য ছিলো কিনা জানি না

এ জনমে, জানি নিশ্চিত নদী ছিলো মায়ের কণক-কুটুম্ব

মা আজ কুলকুল এ কূল ও কূল বাকহীন, বাঁকহারা নদী।

মায়ের খোঁপা থেকে একটাও প্রজাপতি উড়ে যেতে দেখিনি।

তাঁর করতলে চারটি রঙিন প্রজাপতির বসতি গড়ার কথা ছিলো।

 

সম্পর্ক একটি সার্বজনীন মিথ - মিথকে মিথ‌্যে আশ্বাস দেননি মা

শেকড়বিহীন কংক্রিট থেকে মাথার ওপর আদি জড়-জঙ্গল ভালো।

আশ্বিনের ধূলিঝড়ে গার্হস্থ্য প্রেমের মোহ-মদিরতায় ফাটলের আগে

মিহি সুতোয় মা সেলাই করতেন সম্পর্কের আদিম পলেস্তারা।

প্রাকৃতিক বটিকার মতো জোনাকি খসলেও মনে হতো তার

এই জাগতিক ওঠাপড়া জলঝড়ে আরও একটি ফলিং স্টার । 

 


2 comments:

  1. বেশ লাগলো কবিতাগুলো

    ReplyDelete
  2. অসামান্য প্রতিটি কবিতাই, খুব শক্তিশালী লেখা। মুগ্ধ হলাম।
    জয়শ্রী গাঙ্গুলি

    ReplyDelete