আলস্যের জিভ
কখনো
কখনো সত্যিই মনে হয়
আমার
আলস্যের চারটে ফ্যাকাশে জিভ আছে
কোনোকালে
সেগুলো ছিলো একরকম সম্মোহনী শিসের মারণ-কোয়ার্টেট
আজকাল
নেতিয়ে পড়ে থাকে ভ্যাপসা রাস্তায়
নিস্পৃহ
জুতো আর বাতিল ঘামের নুন চাটে
আর
প্রচন্ড রাগে ঞ্ ঞ্ ঞ্ ঞ্ শব্দ করে
নিষ্ক্রিয়তার
চেয়ে স্পষ্টতর কোনো মৃত্যু নেই
যখন
প্রকান্ড চাকার ছায়া ঘনিয়ে আসে জীবনের ওপর
লালচে
হয়ে ওঠে অবসন্ন চাঁদ
একজন
হাল ছেড়ে দেওয়া মানুষের অসাড় স্বপ্নে
অসংখ্য
ছিদ্রে ভরে যায় আদিম ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো
যা
থেকে বেরিয়ে আসে গাঢ় ক্লোরোফর্মের বাষ্প
আর
মাংসাশী উদ্ভিদের প্রকৃত ফুলের মত
বহুদূরবর্তী
হয় ভালোবাসা
যাবতীয়
অনুকম্পা পেরিয়ে এসে আজ
হয়তো
এই অভিযোগ মেনে নেওয়াই ভালো
যে
আসলে আমার আলস্যের চারটে ফ্যাকাশে জিভ
পড়ে
আছে চারটে আলাদা সমান্তরাল দুনিয়ায়
যার
প্রত্যেকটাতেই বৃষ্টি এসে জুতো আর ঘামের স্বাদ ধুয়ে গেলে
ওই
ঞ্ ঞ্ ঞ্ ঞ্ শব্দটা একটা অশ্রাব্য চীৎকারে রূপান্তরিত হয়
মাংসাশী রাতপোশাক
পরিত্যক্ত
বাড়ির গাঢ় নীল চিলেকোঠায়
মাংসাশী
হয়ে উঠেছে একটা রাতপোশাক
রাত
নিস্তব্ধ হলে তার হাড় চিবোনোর আওয়াজ আসছে
ঠান্ডা
কালাশনিকভের মত হাওয়ায়
জানলা
দরজা সশব্দে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শহরে
নিখোঁজ
মানুষের পোস্টারে ঢেকে যাচ্ছে প্রতিটা শৌচালয়ের দেওয়াল
আর
বাধ্যতামূলক ঘুমের ভেতর জ্বেলে রাখা হচ্ছে
জোরালো
সার্চলাইট
এরকম
রাতে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে অভিশপ্ত জাদুঘর
কোথাও
কান্না শোনা গেলে ভারী জুতোর শব্দ
ছড়িয়ে
পড়ে সন্ত্রস্ত অলিগলিতে
সব
ঘড়ি একসঙ্গে থেমে যায় অব্যর্থ সময়ে
অন্তঃসত্ত্বা
বেড়ালের মত সতর্ক হয়ে থাকার চেষ্টা করে
জেলখানার
ন্যুব্জ কয়েদিরা
কিন্তু
আজ তাদের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে
আর
কানের ভেতর থেকে গজিয়ে উঠছে ভয়ার্ত টিউলিপ
বৈদ্যুতিক
চুল্লি উপচে পড়ছে মৃত জোনাকির ডানায়
অশীতিপর
বৃদ্ধ মেগাফোন হাতে আওড়াচ্ছেন সব নক্ষত্রপুঞ্জের নাম
যদিও
তাঁর কন্ঠস্বর ডুবে যাচ্ছে টিভির শীৎকারে
আর
ঘৃণ্য ভুক্তাবশেষ পড়ে থাকছে
হাসপাতালের
আবর্জনা ফেলার পাত্রে
গতকাল
উচ্ছেদপত্র পেয়েছিলেন মুমূর্ষু ঈশ্বর
আর
আজ রান্নাঘরের চিমনির তলায়
তিনি
কুড়িয়ে পেলেন একজোড়া রক্তাক্ত দস্তানা।
আমার বেড়াল
জীবন
আর মৃত্যুর জগতের মাঝখানে
গোঁফের
ডগায় অস্তগামী সূর্যের নরম আলো মেখে
লোফ্
হয়ে বসে থাকা আমার বেড়াল
কুয়াশাচ্ছন্ন
শীতের সকালে
জানলার
পাশে রাখা প্যাকিং বাক্সের ভেতর নিস্তরঙ্গ ঘুমে
রঙিন
মাছের স্বপ্নে বিভোর
অথবা
কোনো গাঢ় নীল নাইটল্যাম্পের রাতে
আমার
পায়ে নরম গা ঘষে ঘষে ঘোরা ছোট্ট সাদা-ছাইরঙা বাঘ
তাকে
ছাড়াই যেন এক সহস্রাব্দ কবে চলে গেছে।
ঝকঝকে
দুপুরের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরে অন্য মার্জার
পড়ে
যাওয়া কুপন তুলে ধুলো ঝেড়ে পকেটে রাখে হতভাগ্য লোক
কোনোদিন
সাইরেন বেজে ওঠে,
ফুটপাথের গর্তে ঢোকে সন্ত্রস্ত ইঁদুর
এইসব
দৃশ্য থেকে অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরতে থাকি আমি একা
তারপর
একদিন সন্ধেবেলা
মৃত্যুর
চেয়েও ভারী পর্দা দু'হাতে ঠেলে সরিয়ে দেখি
বর্তুলাকার
সোনালি চোখ মেলে
ব্যালকনির
রেলিঙে বসে আছে সাদা-ছাইরঙা এক প্যাঁচা
আমার
গাল বেয়ে টসটস করে গড়িয়ে পড়ে জল
আর
আমি অস্ফুটে বলে উঠি:
'লিও, তুই আমার কাছে আবার এসেছিস?'
অসাধারণ। বিশেষ ভাবে মন ছুঁয়ে গেছে 'মাংসাশী রাতপোশাক'।
ReplyDeleteFrom 'Hodor'.
অনেক ধন্যবাদ ভাই। ❤️
Deleteঅপূর্ব লেখা।
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ ভাই! ❤️
Deleteআমার বেড়াল ❤️
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। ❤️
Deleteআমার বেড়াল ও আলসারের জিভ দুর্দান্ত ।
ReplyDeleteভালো লেগেছে জেনে আমি অনেকটা উৎসাহ পেলাম। ধন্যবাদ। ❤️
Deleteদারুন
ReplyDeleteধন্যবাদ!
Delete'নিষ্ক্রিয়তার চেয়ে স্পষ্টতর কোনো মৃত্যু নেই' প্রথমের কবিতাটা জুড়ে এই চিন্তার অনুরণনই যেন পেলাম । খুব ভালো লাগলো , শুভেচ্ছা
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
Deleteআপনার কবিতায় খুবতীব্র এক অন্তর্ঘাত বিচলিত করল। কবিতা তেমনই পারে। বা পারা উচিত। তবে কথার অতিভ্রমণ নিয়ে একটু ভাবলে ভালো হয়। অন্তর্ঘাত তো খুব মেখলানিজঝুম চকিতের শরপ্রকল্পনা। এমনই ভাবি।পাঠক হিশেবে। তবে তেমন কিছু পাত্তা দেবার মতো মতামতের আমি কেউ নই। ছেঁটে ফেলতে পারেন। ভালোবাসা।।
ReplyDeleteআপনার কমেন্ট আজ চোখে পড়লো। মতামত ছেঁটে ফ্যালার কোনো প্রশ্নই নেই। যারা কবিতা পড়ে (বা লেখে) তাদের মধ্যে কাউকেই আমি অন্যদের থেকে কম বা বেশি পাত্তা দিই না। এক কবিতাকে সবাই একভাবে পড়ে না, আর সবরকম মতামতেরই দাম আমার কাছে আছে। যেদিন দেখবো আমার একটা কবিতা প'ড়ে সবার একরকম মনে হচ্ছে সেদিন বুঝবো কিছু একটা ভুল হচ্ছে আমার। আপনার যা মনে হয়েছে তা লেখার জন্য ধন্যবাদ। 'কথার অতিক্রমণ' বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন জানতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু তার অবকাশ এই স্বল্প পরিসরে নেই। ভালো থাকবেন।
Deleteদুঃখিত, কথার 'অতিভ্রমণ' হবে। এটা আগের বার ভুল দেখেছিলাম।
Delete