রিক্সা সিরিজ
*
এ
যেন প্রীতির মেঘ ছেঁড়া ছেঁড়া বিরহের মতো
ক্রমে
এসে জমা হল আমাদের আকাশ আলাপে
দুজনার
চোখে চোখ ছিল ঘোর তন্দ্রায় রত
কখন
যে ফোঁটা ফোঁটা ঝিরিঝিরি নামল প্রলাপে!
কথা
ছিল কিছুদূর গিয়ে ফেরা হবে শুধু আজ
জানতো
কে কাছে এলে ফিরে যেতে চায় না হৃদয়
প্রতিবার
ভালোবেসে এই ভুল করে বাকোয়াজ
অভিসারে
এলে বুঝি প্রতিবার এরকম হয়?
রিক্সায়
হুড দিলে পঙ্খিরাজ পাখনা মেলে
উড়ে
যায় আমাদের নিয়ে মেঘ শহরের বুকে
দূর
থেকে আরো দূরে চেনাপথ ঠিকানাও ফেলে
এই
যাদুবৃষ্টিতে সুখ যার হারানোর দুখে?
শহরে
শ্রাবণ এলে প্রেমিক প্রেমিকা খুশি হয়
প্যাডেলে
প্যাডেলে চলে কামনার সমুখ বিজয়।
*
দুইটি
হৃদয় শুধু চৌম্বক টান অনুভবে
বিলি
কেটে সিঁড়ি খোঁজে পৌঁছাবার প্রথম গোলাপ
অধরের
কাছে এলে কাঁপে ঠোঁট নিজেই নীরবে
ফুটপাতে
দোকানিরা ফেলে দেয় আচানক ঝাঁপ।
কেতলির
শুঁড় দিয়ে ধোঁয়া ওঠে মেঘের আকাশে
আমিও
নিকট হই মেঘ ছুঁয়ে বজ্র তরাস
টাল
খেয়ে চাকা যেন মাতালে মত ধীরে ভাসে
এতো
কাছে সরোবর পেয়ে গেলো যেন দুটি হাঁস!
যে
কপাট তালা ছিল আজ তাতে বোধনের শাঁখ
এই
জল বাতাসের মন্দ্রতায় জাগাল সহসা
জলের
সুরভী ভরা কাছাকাছি আসবার ডাক
চুরমার
করে দিলো লহমায় নামলো বরষা।
কাকাভেজা
হয়ে কাক উরে যায় আকাশে ভীষণ
ক্রিং
ক্রিং বেল দেয় চালকের আচানক মন।
*
প্রবল
বেদনা আজ বুক ভারী করেছে ভীষণ
জোয়ারের
তোলপাড় দুইবুকে ছলাৎ ছলাৎ
চরাচর
ভেঙে নেবে টেনে নেবে খনিজের ধন
বিরহের
বেহালায় ঝড় যেন ওষ্ঠ আঘাত।
স্মৃতিকাব্য
নয় তো আজ শুধু আমরা দুজন
খুব
কাছাকাছি মিশে মেখে আছি ননীর মতন
পারাবত
নেমে আসে উড়ে যায় অলীক পতন
তার
খোঁজ নিতে রাজি নেই আজ আমাদের মন।
এ
বিলাস নয় জানি অধিবাস জলের শপথ
করুণ
কানাই এসে নত যেন রাধার দুয়ারে
অভিমানী
মুখ তুলে চাও তুমি উড়াবো যে রথ
মেঘের
আড়াল চিরে নিয়ে যাবো বজ্র অভিসারে।
নগরে
জমেছে জল আসমান ভরা শুধু ঘোর
সব
আছে তবু যেন রাধাশূন্য আমার শহর।
*
মুখোমুখি
অনুভব তবু দূরে কার ভেজা চুলে
ফুটেছে
কেয়ার ঘ্রাণ যেই তাপ প্রবাহিত হয়ে
জানায়
কপাট খোলো কুলুপ দিয়েছ কেন ভুলে
আজ
বাহু বাহু ছুঁয়ে নদী হয়ে যাবে শুধু বয়ে।
তোমার
কানেট ছুঁয়ে নেমে আসা চুলের মতন
বিরহের
জলছাঁট আদ্রতায় এলোমেলো করে
মুঠোর
ভেতর আছো তবু যেন হারানো রতন
নিখোঁজের
হাহাকার বিদ্যুতের তার গলে ঝরে।
তোমার
দেহের থেকে উড়ে আসা সুরভীর ওম
এতোটা
ধারালো হয়ে ছিঁড়ে খায় আমার এ মন
আচানক
মেঘে মেঘে বেজে ওঠে যেন ঝমঝম
পলিথিন
পর্দায় হবে না সে আড়াল দহন।
রিক্সায়
আঁকা আছে নায়ক নায়িকা সিনেমার
সেই
সব দৃশ্যে আজ অভিনয় তোমার আমার।
*
গাঙুরের
জল ধরে কে গিয়েছে বেদনায় ভেসে
দেবতার
ঠিকানায় গিয়ে তার সিথির সিঁদুর
ফেরাবে
অটল পণ চোখেমুখে বিষাদ আবেশে
এমন
বিরহ নীলে পোষ মানে দেবতা অসুর।
আমরাও
ভেসে যাই পিচ ঢালা রাস্তার বুকে
রিক্সায়
হুড দিয়ে ধীরে বেয়ে যেন কালো জলে
আমার
বাহুতে তুমি রাখ গাল আচানক সুখে
নীল
হয়ে যায় মেঘ ঈর্ষার মনসা ছোবলে।
সজল
শহরে আজ আমাদের ভেসে ভেসে চলা
মায়াবতী
লাগে যেন চারিদিক ঈষৎ প্রাচীন
দালান
দেয়ালে ঘেরা শহরের অলিগলি তলা
অভিসার
বুকে নিয়ে কাঁচ এঁটে হয়েছে রঙিন।
ঝুপ
ঝুপ বৃষ্টিতে ভিজে যায় অলিন্দ গ্রিল
আমাকে
ছুঁয়ো না তুমি ছুঁলে আমি হয়ে যাবো নীল।
*
অবোধ
চালক সে তো জানে না কোথায় যাবে মন
ঠিকানা
বলিনি তাকে, বলেছি নিজের মত বাও
যেমন
তোমাকে আমি ছুঁয়ে ছুঁয়ে খুঁজেছি গোপন
কোথায়
রত্ন রাখা সে কপাটে তালা খুলে দাও।
রঙিন
পর্দা এঁটে পৃথক হয়েছি নগরীতে
তোমাকে
জাপটে ধরে পাড়ি দেই কামনার মেঘ
নরম
জলের ছাঁট টের পাও অনুরন শীতে
দেহের
ঝরকা কাঁপে কলতান জোয়ারের বেগ।
তোমার
অঙ্গে মধু মনে বিষ চোখ কামনার
হৃদয়
মত্ত গজ মাহুতের করে না বালাই
কোমল
শেকলে তাকে বেঁধে ফেলা যায় বেদনার
এমন
মন্ত্র আছে জানো নাকি তপ্ত কড়াই?
আমরা
গিয়েছি উড়ে লাল নীল রঙিলা ভুবনে
বাতাসে
বেদনা ভাসে সাগরের ফেনিল কাঁপনে।
*
মুঠোফোন
বেজে উঠে পয়গাম এনেছে তোমার
ফিরে
যেতে হবে বাড়ি ঝিরঝিরে বৃষ্টি ফেলেই
যখন
দুয়ারে ঠোঁট নত হয়ে এসেছে আমার
তখন
অবোধ ফোন ধ্যান ভাঙে হটাৎ বেজেই?
বৃষ্টিতে
অভিসারী ছাড়ে না তো প্রেমিকের হাত
যে
মন তুচ্ছ করে নিন্দার কাঁটা চোখ মুখ
উঠে
পড়ে রিক্সায় হুড টেনে দিন করে রাত
সে
কেন একটি ফোনে ফিরে যাবে ফেলে এই সুখ?
আসলে
কাটলে তাল মজমায় ফেরে না সে গতি
তাই
কি খাপরা লাগে কাজরির কান্নামালায়
বিদায়ের
বিরহের তোলপাড়ে ভেঙেছে যে রতি
তোমার
বিদায়ী চুমু তিব্রতায় সে কথা জানায়।
রিক্সায়
হুড দিলে যেন এক ছাঁদনাতলায়
তুমি
আমি উড়ে যাই শিহরণ পাখির ডানায়।
*
এতোটা
জলদি বেলা চলে যায় অভিসারে এলে
দীর্ঘ
সময় যেন মনে হয় সামান্য চুমোয়
নিবিড়
হবার আগে শেষ হল তৃষার্ত ফেলে
পাঁজরের
মরুতায় ভেঙে পড়ে বিরহ ধুলোয়।
তখন
আঙুল শুঁকে শিহরণে পাই কিছু ঘ্রাণ
তোমার
ওষ্ঠ লাভা ঠিক যেন প্রণয়ের মধু
ছুঁয়ে
ছুঁয়ে কেঁপে উঠি কামনায় আছো হে পরাণ
আমার
অঙ্গে তুমি অঙ্গদ শিহরণে বধূ।
ভালোবাসা
চোখে নিয়ে আসমানে চোখ মেলালেই
নীলাভ
কামিজে নারী দেখি মেঘে- টিশার্টে আমি
মেঘের
ভেতর আমি বিদ্যুতের মধু ঢেলে দেই
সহসা
মিথুন দেখি মেঘে মেঘে তুমি আর আমি।
তৃষ্ণা
বক্ষে ভরা চোখে মুখে হাজার বছর
মুহূর্তে
কেটে যায় বেদনায় কাতর শহর।
*
বিরহে
বিবশ আমি হয়ে যাই যখন তোমাকে
ছেড়ে
আমি একা ফিরি ভেজা পথ হৃদয় শহরে
একলা
রেলিঙে বসা কাকা দেখি শোকাহত ডাকে
কণ্ঠে
বেদনা কেন? বিজিতেরও কান্না ঝরে?
এতোটা
নিকটে এসে শেষতক যাও একা চলে
যখন
বাদল শেষে মনে হয় জীবন মধুর
পথের
দু’ধারে গাছ সবুজাভে ভেঙে পড়ে ঢলে
তখনো
শ্রুতিতে তুমি কথা কও বিদায়ের সুর।
আমার
একলা পথ বাড়ি ফেরে তুমিহীন হতে
আবার
তৃষ্ণা নিয়ে পথ চেয়ে থাকবো তোমার
অভিসারে
উড়ে যাবো রিক্সায় পিচ ঢালা পথে
প্রতি
অভিসার হোক প্রথম নতুন দুজনার।
সিগারেট
পুড়ে পুড়ে শেষ হয় সমস্ত রাত
বিরহে
কাঁপছি আমি তুমি কই এসে ধরো হাত।
*
আমি
জানি এ বয়স চলে গেলে আসে না ফিরে
তাই
ভালোবাসাটাকে খুব করে লুফে নেই বুকে
দেহের
দুয়ারে এসে ফিরে আমি যাই না তো নীড়ে
ভালোবাসা
মেখে নেই তুমি আমি তালাশের সুখে।
অধরা
ধরতে এসে পেয়ে যাই আমরা আগুন
জানি
এই ভ্রমনেই শেষ হবে তেষ্টার জল
ভেতরের
সুর বেজে ক্ষয়ে যাবে ফুরবার ঘুণ
পুনরায়
মরু হয়ে ফিরে আসি তোমার অতল।
যেদিন
তোমাকে দেখে মুগ্ধতায় ডুবে এ আমি
মেনেছি
জীবন এক পাড়ি দেবো দুজনে মিলেই
হাত
ধরে হেটে চলা এ জীবন ভ্রমণে আগামী
কাল
কি যে হবে তা তো আমাদের কারো জানা নেই।
ভালোবেসে
জলকেলি করে এসো জীবন কাটাই
রঙের
বাহারে শুধু এ জীবন বাতাসা মিঠাই।
*
কখনো
ভেবেছি আমি তুমি হীন শ্রাবণে আমার
বেঁচে
থাকা অহেতুক হয়ে যাবে নিভৃত মরণ
যখন
তোমাকে পাই খুব কাছে বাহুতে আমার
তখনো
বিষাদ লাগে, মরে যাবো? তুমিই জীবন!
এমন
মেঘের দিন ঝরে যাবে রোদের সকালে
মুছে
যাবে পথে পথে মানুষের বেদনার জল
আমরা
ফিরবো ঘরে থিতু হবো বয়সের ডালে
প্রাচীন
বটের মতো নেমে যাবে শেকড়ের ঢল।
তখনো
প্রেমিকা যাবে প্রেমিকের আকাশ ডানায়
উড়ে
উড়ে দুজনার ভেজাকাক বর্ষা যাপন
আমার
কবিতা শুধু রয়ে যাবে কালের খাতায়
বন্দর
ছেড়ে যাবো অধিকার তোমার কানন।
আদম
সুরত আমি তুমি মাটি বীজ বপনের
ছিলাম
থাকবো আছি এ জীবন শুধু কৌমের।
No comments:
Post a Comment