বাক্‌ ১৫২ ।। তৈমুর খান


 

যাত্রা 

 

পাওয়া না-পাওয়ার মাঝখান দিয়ে চলে যাচ্ছি 

সপ্তর্ষির আলো এসে পড়ছে পথে 

যতটুকু দেখা যায় পথ 

আলো-আঁধারের রহস্যে ঘেরা

মৃত আবেগের চর, ম্লান সন্ধ্যাবেলা জীবনকাহিনির সংরাগ 

 

যেতে যেতে দু-একটা রঙিন হাত আর হাতের আঙুল 

যদিও সিঁদুর পরা কপাল, এলোমেলো খোঁপা 

যদিও চপ্পল নেই পায়ে, অলৌকিক মৃদু রমণীরা 

 

আদিম প্রজ্ঞার ভার বয়ে নিয়ে যাই 

আমাদের মৃত্যুর কাছে পৌঁছাতে হবে বলে 

আজ আর কোনও পিছুটান নেই 

নিজেকে বড় নির্ভার লাগে 



 

সাধনা 

 

হৃদয় খাতায় বাক্য ও শব্দেরা শুয়ে আছে 

এত দীর্ঘশ্বাসের পর কাকে জাগাব আজ? 

মাথার ওপর মেঘেরা জমেছে 

বাগানে ময়ূর নেই,বাগান ঘিরে রেখেছে সমাজ 

 

কোলন আর সেমিকোলনে কিছুটা বিশ্রাম 

মাঝে মাঝে যদিও বসেছে ড্যাস 

বিকল্প কমার কাছে বিবৃতির বিন্যাস 

সমূহ শূন্যতা নিয়ে উদাসীন চেয়ে রইলাম 



সব নিবেদন পুড়ে গেলে স্বপ্নেরা বসবে কোথায়? 

দাঁড়ি টেনে টেনে সব সহজিয়া বোধ 

বাউলের ঘরকন্নায় ডুবে যায় 

একে একে সম্মোহন সাজায় নির্বোধ 




নদী পেরিয়ে যেতে হবে

 

 

 বেঁচে থেকে কেবলই পিপাসা পায়

 যত হাঁটি তত পথ

 রাত্রি কাটিয়ে আবার রাত্রি, সকাল সকাল চলা শুরু হয়

 

 বিবাহের হলুদ ফুল কবেই ঝরে গেছে

 মেহেদি পাতার রং ফিকে হয়ে গেল

 এখন উভয়েই নেকড়ের মতো

 এ-বন সে-বন ঘুরে চলে এসেছি বহুদূর বনে

 

 মাঝে মাঝে কামড়ানো স্বভাব

 যুদ্ধের মহড়ায় কলঙ্কিত জ্যোৎস্নার প্রান্তর

 ঘরবাঁধা ঘর হাহাকার করে ওঠে

 ছেলে-মেয়ে সবাই বিষাদ

 

 শুধু মনে মনে ছবি এঁকে টাঙাই

 নদী পেরিয়ে যেতে হবে, এই মহাকালের নদী

 ঢেউ ভেঙে ভেঙে সাঁতার আমাদের



 

খাঁচার ফাঁক দিয়ে যতটুকু দেখা যায় 

 

 

 তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল

 হঠাৎ এই দেখার ভেতর

 আকাঙ্ক্ষারা জেগে উঠল আবার

 আবার চাঁদ, আবার আলো

 আবার সূর্যের ভাষা পেতে চাইল মন

 

 তোমরা সবাই মেঘমালা ভেসে ভেসে বহুদূর যেতে পারো

 আমরা গার্হস্থ্য খাঁচায় পোষা পাখি

 খাঁচার ফাঁক দিয়ে যতটুকু দেখা যায় ততটুকু দেখি

 

 তবুও জলের ছাঁট আসে,বিদ্যুতের ঝলকানি

 তবুও বসন্ত বাতাসে পত্রপল্লবের কানাকানি

 কেউ কেউ ভ্রমর, শুধুই ডানার কম্পন শুনি

 স্বপ্ন এসে তাঁত বোনে,স্বপ্নে ডুবে যায় অধরা কাহিনি!




 

অন্তর্জীবী

 

কোথাও কোথাও ব্যথা থেকে যায় 

বলা হয় না কিছুই শুধু ফিরে আসতে হয় 

সবই তো জলের কাহিনি, নৌকা অথবা ডিঙি বেয়ে 

পারে আসতে চাই;সম্পর্কের সাঁকো কে বানাবে? 

অথচ হৃদয় আছে, হৃদয়ের বাগানে ফুল ফোটে 

যে ফুলে পূজা হয় অথবা তোমার জন্য মালা হতে চায়। 

 

আজও কি আর দাঁড়াতে পারি তোমার দরজায়? 

অথচ মন এসে তোমাকে দেখে যায় মনে মনে 

ভাঙা মন ফিরে এসে আজও কল্পনার নকশি কাঁথা বোনে! 

 

2 comments:

  1. আপনার কবিতা আমার ভালো লাগে। কবিতাগুলি পড়লাম। খুব সুন্দর।
    পৃথা চট্টোপাধ্যায়

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

      Delete